কথায় বলে, সময় খারাপ হলে, ভালো পরিণাম হওয়ার পরেও খারাপ কিছু আটকানো যায় না। এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, যখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফ থেকে লোকসভার ফ্লোরে, গাফিলতির কারণে মৃত্যুর ঘটনায় ডাক্তারদের শাস্তির ব্যাপারে প্রকৃত সংশোধনীর ব্যাপারে আশ্বাস নিয়ে মতপার্থক্য তৈরি হয়। অমিত শাহ প্রথমে বলেন: “ডাক্তারের মেডিকেল সংক্রান্ত গাফিলতির কারণে যদি কারোর মৃত্যু হয়, তাহলে সেটাকে খুনের সমতুল নয় এমন শাস্তিযোগ্য হোমিসাইড হিসাবে বিবেচনা করা হবে। আমি আজ একটা সংশোধনী আনছি। ডাক্তারদেরকে শাস্তির আওতার বাইরে [এই সেকশন অধীনে] রাখা হয়েছে। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) আমাদেরকে [আওতার বাইরে রাখার] অনুরোধ করেছিল।” তবে, সংশোধীত ভারতীয় ন্যায় (দ্বিতীয়) সংহিতা বিল, ২০২৩-এ ডাক্তারদেরকে এমন ছাড় প্রদান করা হয়নি। বরং, সংশোধীত সেকশন ১০৬(১)-এ বলা হয়েছে যে, একজন রেজিস্টার্ড মেডিকেল প্র্যাক্টিশনারকে (আরএমপি) সর্বাধিক দুই বছরের জেল এবং জরিমানা দিয়ে শাস্তি প্রদান করা হবে। কার্যত, ইন্ডিয়ান পিনাল কোডের সেকশন ৩০৪(এ) অধীনে ডাক্তারদের যে শাস্তির বিধান আছে, তা বিএনএসএসে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অবস্থার পরিবর্তন না হওয়া সত্ত্বেও আইএমএর তরফ থেকে সরকারকে ধন্যবাদ জানানো হচ্ছে। তবে একটু গভীরে দৃষ্টি দিলে দেখা যাচ্ছে, এই ব্যাপারে পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে যে খসড়া বিল জমা দেওয়া হয়েছিল, তাতে গাফিলতির কারণে রোগীর মৃত্যু হলে, একজন আরএমপি-কে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছিল। তখন স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে আইএমএ জানিয়েছিল যে, একজন রোগী এবং ডাক্তারের মধ্যে সম্পর্কে কোনো অপরাধমূলক উদ্দেশ্য থাকে না, তাই কারাদণ্ডের বর্ধিত মেয়াদ যুক্তিযুক্ত নয়। কমিটির তরফ থেকে তখন শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়, যা শেষ পর্যন্ত, আইনটি উত্তীর্ণ হওয়ার সময়, আরও কমিয়ে দুই বছর করা হয়।
মেডিকেল গাফিলতি সংক্রান্ত নির্দেশিকা সংজ্ঞাভুক্ত করা ইনডেক্স মামলা — জ্যাকব ম্যাথু বনাম পাঞ্জাব রাজ্য এবং অন্যান্য (২০০৫)-তে আলোকপাত করা প্রাসঙ্গিক। আদালত বলেছিল যে, গাফিলতি গুরুতর বা উল্লেখযোগ্য হতে হবে এবং তার ফলে, অপরাধমূলক দায়ের প্রসঙ্গ তখনই আসবে, যদি দেখা যায় ডাক্তারের কাজকর্ম গাফিলতিমূলক বা দায়িত্বজ্ঞানহীন ছিল, যে কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এমনকি শাস্তি প্রদান প্রক্রিয়ার সময় বিভিন্ন স্তরে এই বিষয়টি একজন যোগ্য বিশেষজ্ঞকে দিয়ে খতিয়ে দেখা হয় যে আদৌ ডাক্তারের গাফিলতির কারণেই কি মৃত্যু হয়েছে। এটা বলা যেতে পারে যে, ডাক্তাররা নিজেদের কর্তব্য পালন করার ক্ষেত্রে, আইন অধীনে পর্যাপ্ত সুরক্ষা পেয়ে থাকেন। তবে বাস্তব বলছে, মেডিকেল পেশাদারদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। ডাক্তাররা যাতে আক্রমণের ভয় না পেয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন এবং কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে সে ব্যাপারে যেন অনুরূপ ভয়ের কারণে ত্রুটি বা ধোঁয়াশা না থাকে, তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। তবে মৃত্যুর জন্য ডাক্তারদেরকে ভিলেন হিসাবে দেখার প্রচেষ্টার কারণে ডাক্তাররা হয়তো রোগীদেরকে সেরা উপলভ্য সেবা প্রদান করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। সেটা কোনো পরিস্থিতিতেই গ্রহণযোগ্য নয়।